সনাতন ধর্মের দৃষ্টিতে বটবৃদ্ধ এবং এর গুরুত্ব
সনাতন ধর্মের দৃষ্টিতে বটবৃদ্ধ এবং এর গুরুত্ব
হিন্দুধর্ম
ও প্রকৃতি এই দুইটির সঙ্গে
রয়েছে গভীর সংযোগ। কৃষ্ণ রোপণও পুণ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। বৃদ্ধ পুজোও করা হয়। বৃদ্ধ সহ প্রকৃতির সমস্ত
উপাদানগুলির উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন ধর্ম শাস্ত্রে। শাস্ত্রে এমন দশটি বৃক্ষ সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা সনাতন ধর্মে
পেয়েছে বিশেষ স্থান। এই দশটি বুদ্ধের
মধ্যে অন্যতম এবং পুজনীয় বুদ্ধ হচ্ছে বটবৃক্ষ ।
বট
বৃদ্ধ বা বট গাছ
অশখা বৃক্ষের পারে হিন্দু ধর্মে বটবৃক্ষেরও সাধ্যের গুরু রয়েছে। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের বাসস্থান
হিসাবে বটরিয়ে বিবেচিত হয়। বট গাছকে যয়ং
শিবও বলা হয়। বট গাছ দর্শণ
করাকে দেবাদিদের মহাদেব দর্শনের সঙ্গে তুলনা করা হয়। বিভিন্ন তীর্থস্থানে দেখতে পাওয়া যায়। যেমন প্রয়াগ, ভুবনেশ্বর প্রভৃতি তীর্থস্থানে এক একটি বটবৃক্ষ
আছে। প্রবাদ আছে এই সকল বটগাছের
মৃত্যু নেই। কতকাল থেকে চলে আসছে, তবু ঝড়ে একটি শাখা ভাঙ্গে না, ব্রৌদে একটা পাতা শুকায় না। ভক্তিপূর্বক এই সকল বুদ্ধে
জলসেচন করলে অক্ষ লাভ
অভয়বট
বলতে কি বুঝি?
সনাতন
ধর্মাবলম্বীরা বড় বট গাছকে অক্ষয়
বট নামে অভিহিত করে থকি। বিভিন্ন নৌতিক সংস্কৃতিতেও বড় বড় গাছের পূজা করার রীতি লক্ষ্য করা যায়। ভারতবর্ষে বটগাছ ছাড়াও তুলসি, অর্থাৎ গাছের পূজার প্রচলন আছে। আজ জানব অক্ষণা বঁট সম্বন্ধে কিছু কথা
‘তাভ্যাবট'
শব্দের আভিধানিক অর্থ অক্ষ্যা পরমায়ু, প্রাচীন- ব্যক্তি, অতি বন্ধ আনী ব্যক্তি প্রভৃতি। পুরাণে বর্ণিত ভাওয়বট হতে শব্দটির উৎপত্তি।
প্রয়াগ,
ভুবনেশ্বর, কামাখ্যা প্রভৃতি তীর্থস্থানে এক একটি বটবৃদ্ধ
আছে। প্রবাদ আছে এই সকল বটগাছ
চিরঅমর। কতকাল কতবহর থেকে চলে আসছে, তবু ঝড়ে একটি শাখা ভাসে না, রৌদ্রে একটা পাতা শুকায় না। রুক্তিতরে এই সকল বৃদ্ধে
জলসেচন করলে অভ্যাফল লাভ হয়। প্রয়াণের অক্ষতা বট এখন কেল্লার
ভিতর পড়েছে। হায়াতে থাকার কারনে তার বুদ্ধি নেই, গল্পটা নিতান্ত ক্ষুদ্র।
জগন্নাথপুরীতেও
অমলা বটের বিবরণ পাওয়া যায়—
সুধন্য
অক্ষভা বট, সুধনা সিন্ধুর তট,
ধন্য
নীলাচল তপোবন (ময়মনসিংহ)।
প্রয়াগের
অম্লনাবট অনেক প্রাচীন বৃক্ষ। আগে ঐ গাছ ঘোলা
স্থানে ছিল; দিনে দিনে চারপাশে মাটি জমেছে, সুতরাং গাছটিও নিচে পড়েছে। এলাহাবাদ দুর্গের এলেনবরা ধরিকের ঠিক পূর্ব্বে পুরাতন মন্দির, মন্দিরের পাশেই ভাষাবট। চীন পরিভাজক বিরাং শাং ঐ পুরাতন মন্দিরের
উল্লেখ করে গেছেন। অকবর বাদশার সময় হিন্দুরা এই বৃদ্ধের মূল
হতে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে প্রাণত্যাগ করবেন। তীর্থযাসীরা প্রাণে গেলে এই পূণ্যতরু দেখতে
যান। অক্ষরবটের পূজা করলে আড্ডার ফল লাভ হয়।
তাই
কথায় বলে-
প্রয়াগেতে
মুড়িয়ে মাথা।
ম’রগে পাপী যেথা সেথা।
পুরব্বে
গয়াক্ষেত্রেও একটি অক্ষ্যাবট ছিল। পাণ্ডবেরা
বনবাসে
গিয়ে লোমশমুনির উপদেশানুসারে সেই বৃদ্ধ দর্শন করেছিলেন। রামায়নে- দশরথের প্রেতারা সীতাদেবীর হাত থেকে চালের আভাবে বালুকার দিও গ্রহণ করেছিলেন। এর তুলসী গাছ
ও অ্যাবট। রামচন্দ্র মাটনার সত্যতা যাচাই করতে যখন ফল্গুনদী ও তুলস গাহকে
প্রশ্ন করেন, তখন তারা মিথ্যা কথা বলে। ফলে সীতাদেবী তাদের অভিশাপ দেন। কিন্তু অক্ষয়বট গত্য কথা বলায়, সীতাদেবী তাকে আশীর্বাদ করেন।
কুরুক্ষেত্রের
প্রাগনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক অর্জুনকে গীতা দানের সাক্ষী আজও হয়ে আছে সেখানের অক্ষবটবৃক্ষ।
সনাতন
হিন্দু ধর্মমতে তাঁদের বৃহৎ বটগাছে জল দিলে এবং
পূজা করলে মনস্কামনা পূর্ণ হয়। প্রাচীন কাব্যগ্রন্থে বৈতরণী নদীর তীরে অক্ষয় বটের উল্লেখ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সীতাকুণ্ডে একটি অক্ষতা বঁট আছে। সীতাকুণ্ডের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শিবচতুর্দশীমেলায় নানা ধরনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সাথে অক্ষয়াবট্যোও পূজা করা হয়।
নিরঞ্জান
নদীর পাড়ের যেখানে বুদ্ধ (গৌতম) বোধিক লাভ করেছিলেন, সেখানে প্রথম বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেন সম্রাট অশোক। এই মন্দিরের পাশে
একটি অক্ষয়বট আছে।
বাংলাদেশে
চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার ব্যাসকুণ্ডের পশ্চিম পাড়ে এবং ভৈরব মন্দিরের পাশে একটি বিশাল বটবৃদ্ধ রয়েছে। এটি ভক্তদের কাছে অক্ষয়বট নামে পরিচিত। পুরাণমতে, গল্প ছিলেন একজন ধার্মিক রাজা। তাঁর পিতার নাম ছিল অমূর্তরয়। তিনি যজ্ঞ-আহুতির অবশিষ্টাংশ আহার করে শতবর্ষ উপাসনা করেন। ভারতবর্ষের তিন জন দেবতার মধ্যে
অস্ত্রগণ্য ভাগ্নিদেব সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর প্রার্থনামতে তাঁকে বেদ অধ্যয়ন করার তাধিকার দেন। অগ্নির বরে ইনি পৃথিবীর উপর আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হন। এরপর তিনি বিশাল এক যজ্ঞের আয়োজন
করেন। এই যজ্ঞকালে একটি বটবৃদ্ধ চিরজীবী হয়। চিরজীরী বট বৃক্ষটি অক্ষয়বট
নামে পরিচিত। মূলত কাহিনি থেকে বাংলা শব্দ 'অক্ষয়বট'-এর উৎপত্তি। বাংলায় এখন 'অক্ষয়বট' বলতে কোনও বটবৃক্ষ বোঝায় না। দীর্ঘজীবী, প্রাচীন ব্যক্তি প্রভৃতি বোঝায়।
Nice
উত্তরমুছুন