শনিবার, ২৬ মে, ২০১২

যদি কেউ যায় হারিয়ে চিরতরে

যদি কেউ যায় হারিয়ে চিরতরে
রেটিং :

0%
গড় রেটিং:

জীবন খুব রহস্যময় এক জিনিস! টিনএজে জীবন অনেক বেশি গতিশীল ও রঙিন হয়ে ধরা দেয়। হয়ে ওঠে অনেক বেশি স্বপ্নময়। কিন্তু এমন মুহূর্তও আসে, আসতে পারে_ যেটির জন্য ভুলেও অপেক্ষা করে না কেউ; নেয় না কোনো প্রস্তুতি! তবু আসে, আসতে পারে কালক্ষণ! হারিয়ে যেতে পারে খুব কাছের কেউ। হয়তো বন্ধু, হয়তো আত্মীয়। আর এ হারিয়ে যাওয়া মানে হারিয়ে যাওয়াই, একেবারে চিরতরে। তাকে ফিরে পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না। অনাকাঙ্ক্ষিত, তবু এমন কঠিন মুহূর্ত যদি এসে দাঁড়ায় সামনে, তখন কী করে তোমরা সামলে নেবে নিজেকে? তার কিছু বুদ্ধি নিয়ে সাজানো হলো আজকের এ আয়োজন। লিখেছেন তারজিনা ইসলাম এ্যানী

খুব কাছের কেউ মারা গেলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পক্ষেও তা মেনে নেওয়া কষ্টকর। আর তোমরা যারা টিনএজার, তাদের কাছে তো এ বেদনা হিমালয়ের চেয়ে বড় হয়ে ধরা দেয়। আর তা এতটাই কাবু করে ফেলতে পারে যে, জীবনের মানেটাই একেবারে নতুন হয়ে উঠতে পারে তোমার কাছে।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা দুর্ঘটনা থেকে তোমাদের ভেতরে জন্ম নেওয়া বিষাদাত্মক অনুভূতি তোমার সাবলীল চিন্তা-চেতনাকে একেবারে ডুবিয়ে দেওয়ার অপক্ষমতা রাখে। তুমি হয়ে যেতে পার আত্মহারা। কিন্তু তবুও তো জীবন বয়ে চলে জীবনের নিয়মে। ফলে, এ রকম অপূরণীয় ক্ষতির ভেতরও বেঁচে থাকার মন্ত্রণা শিখে নিতে হবে তোমাকে। হতে হবে শক্ত। ভাবতে হবে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মতো।
কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব? চলো একটু ভেবে দেখি সেটা।
থাকো সৎ নিজের ও অন্যদের সঙ্গে
যখন তোমার আপন কেউ মারা যাবে, তখন তোমার উচিত হবে যতটা সম্ভব নিজের এবং অন্যদের সঙ্গে সৎ থাকা। তুমি এমন সাহসী একটা ভাব করবে, মর্মাহত হলেও ভেঙে পড়োনি তুমি; এ ক্ষতি সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তুমি রাখো। খেয়াল রেখো, তোমার অনুভূতি যতটাই বেদনার হোক না কেন, সেটি যেন তোমাকে পুরোপুরি পর্যুদস্ত করতে না পারে।
চলো, দেখে নেওয়া যাক, কেমন হতে পারে অনুভূতি তোমার_
ূ বিষণ্নতা।
মর্মপীড়া।
ূ একাকিত্ব।
ূ অপরাধবোধ।
ূ রাগ।
ূ ক্ষোভ।
ূ অনিশ্চয়তাবোধ।
ূ উপশম।
ূ হতাশা।
ূ মানসিক চাপ।
ূ অসাড়তা।
এবং
এমন এক পক্ষাঘাতগ্রস্ততা_ যেন কোনো সিদ্ধান্তেই পেঁৗছুতে পারছ না তুমি।
ব্যক্ত করো অনুভূতি
তুমি যখন তোমার অনুভূতিগুলো শনাক্ত করতে পারবে, তখন সেটি চেপে না রেখে প্রকাশ করো অন্যদের সঙ্গে। এমন বিষাদাত্মক অনুভূতিগুলোকে নিজের মধ্যে আটকে রাখলে সেটা তোমার হতাশাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। আর তার বিস্ফোরণ হতে পারে ভয়াবহ।
কথা বলো বন্ধু কিংবা আত্মীয়ের সঙ্গে
জানি, একদমই ইচ্ছে করবে না, তবু এ ক্ষেত্রে তুমি প্রাপ্তবয়স্ক কারও সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পার। হতে পারেন তিনি তোমার শিক্ষক, কিংবা আত্মীয় কিংবা এমন কেউ, যে কিনা তোমাকে বুঝতে পারবেন। তাও যদি না হয়, তাহলে যা যা করতে পার তুমি_
ূ লিখতে পার জার্নাল।
ূ লিখে ফেলতে পার গান কিংবা কবিতা।
ূ ব্লগে করতে পার লেখালেখি।
ূ সাহায্য চাইতে পার অনলাইনে।
ূ যোগ দিতে পার স্থানীয় কোনো সাপোর্টিং গ্রুপে।
করো বাইরে যাওয়া-আসা
নিজের এমন মর্মযাতনাদায়ক অনুভূতিগুলোকে একটু রেহাই দেওয়ার জন্য বাইরে বের হতে পার। দৃশ্যের বদল তোমাকে ভালো অনুভূতি দিতে পারে। কখনও কখনও একটা নতুন সেটআপ পারে লাঘব করতে তোমার দুঃখ।
কিন্তু যাবে কোথায়? বলি_
ূ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে আসো।
ূ ব্যায়াম করে নিজেকে ক্লান্ত করার চেষ্টা করো।
ূ কোনো বই বা সিনেমাতে নিজেকে হারিয়ে ফেলার চেষ্টা কর।
ূ যেতে পার কাছের কোনো মাঠে খেলা দেখতে।
কাছের কারও মৃত্যুশোক নিয়ে বেঁচে থাকতে অনেকটা সময় লাগবে সহজ হওয়ার জন্য, এটাই স্বাভাবিক। কোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের মৃত্যুশোক নিয়ে বেঁচে থাকাটা কোনো প্রতিযোগিতা নয়; আবার এমন কিছুও নয়. যেটা তুমি ভেবে রাখবে আগে থেকে।
প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব ধারণা থাকে মৃত্যুশোক সামলে বেঁচে থাকার। ফলে, যে জিনিসটি তোমাকে সাহসী করে তোলে, যে জিনিসটি তোমার শোককে দমিয়ে দিতে তোমার ভেতরে জীবনের জয়গানকে জাগ্রত করে, সেটিকে অবলম্বন করেই চেষ্টা কর তুমি। জেনে রেখো, তোমার বন্ধু বা পরিবারের সদস্যরা সম্ভবত তোমার ইশারার জন্য অপেক্ষা করছে। তাই যদি তাদেরকে একটুও দ্বিধান্বিত মনে হয়, তাহলে হতাশ হয়ো না। ভেবে নিও, তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না_ কী করে তোমাকে সাহায্য করবে।
বলি, বন্ধু, একটু ধৈর্য ধর। হতাশ হয়ো না। দেখবে, তোমার জীবন নতুন আঙ্গিকে শুরু হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, তুমি তাদেরকে ভুলে যাবে। বরং, পরে দেখা যাবে, তুমি তোমার জীবনে সুখী হয়েছো। আর তারা ঠিক এই জিনিসটিই চেয়েছিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন