বাংলা পঞ্জিকানিবেদিত
বাংলা সনের ইতিহাস
ইতিহাস এবং
ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষ কিছু আনন্দ এবং স্মৃতিকে আপন করে নেয়। আর এ আপন করে
নেওয়ার বিভিন্ন স্তর এবং সময়ের পথ ধরে সংস্কৃতির বিকাশ। প্রতিটি জাতি ও সভ্যতা সংস্কৃতির
মাধ্যমে খুঁজে পায় তার নিজস্ব অনুভূতি এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশী ও বাঙালী
জাতি হিসেবে, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আমাদের এমন একটি উঠসব হল পহেলা বৈশাখ।
পহেলা বৈশাখ হলো বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। স্বাগতম, সুস্বাগতম বাংলা নববর্ষ। আমরা
সবাই প্রতি বছরে ১৪ই এপ্রিল ১লা বৈশাখের এই দিনটি পালন করে থাকি। কিন্তু আমরা সবাই
কি জানি বা কেউ জানার চেষ্টাও করেছি কি এই পহেলা বৈশাখের ইতিহাস? সাম্প্রদায়িক শক্তি
বারবার চেষ্টা করেছে বৈশাখের ঐতিহ্যকে রুখে দিতে, তারা ইতিহাসকে ধ্বংস করতে চেয়েছে,
তারা “হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি”
বলে প্রচার করেছে।
বাংলা সনের
ইতিহাসঃ
পাকিস্তান
সরকারের এই অন্যায় আচরণের জবাব দিতেই “ছায়ানট” ১৯৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল (১লা বৈশাখ, বাংলা ১৩৭২ সন) রমনার
বটমূলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “এসো হে বৈশাখ এসো এসো" গানটি দিয়ে সর্বপ্রথম
যাত্রা শুরু করে। বস্তুত এই দিনটি থেকেই “পহেলা বৈশাখ” বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম এক পরিচায়ক
রূপ ধারণ করে। ১৯৭২ সালে (বাংলা ১৩৭৯ সন) পহেলা বৈশাখ' বাংলাদেশের জাতীয় পার্বন হিসেবে
অন্তর্ভুক্ত হবার আগ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার ২১এ ফেব্রুয়ারীর মতোই থামিয়ে দিতে চেয়েছে
বৈশাখের উদযাপন।
হিন্দ বা
বৌদ্ধ প্রভাব
কোন কোন ঐতিহাসিক
বলেন বাংলা বর্ষপঞ্জি এসেছে ৭ম শতকের হিন্দু রাজা শশাঙ্কের কাছ থেকে। আকবরের সময়ের
অনেক শতক আগে নির্মিত দুটি শিব মন্দিরে বঙ্গাব্দ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। আর এটাই
নির্দেশ করে, আকবরের সময়ের আরও অনেক আগেও বাংলা বর্ষপঞ্জির অস্তিত্ব ছিল। বৈদিক আচার
অনুষ্ঠানের জন্য কোন সময়ে কি কাজ হবে এধরনের ধারণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বৈদিক যুগের
জ্যোতিঃশাস্ত্রে পারদর্শীগণ তখন মহাকাশের বিভিন্ন জ্যোতিষ্কের চলাফেরা দেখে সময় সম্পর্কিত
হিসাব নিকাশ ও এই সব আচার অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করার কাজ করতেন। জ্যোতিঃশাস্ত্র
বিষয়ক পাঠ ছিল ছয়টি প্রাচীন বেদাঙ্গ বা বেদ সংক্রান্ত ছয়টি প্রাচীন বিজ্ঞানের একটি-
যেগুলো হিন্দুধর্মগ্রন্থের অংশ। বৈদিক আচার অনুষ্ঠানের জন্য প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি
একটি উন্নত ও পরিশীলিত সময় নির্ণয় কৌশল এবং বর্ষপঞ্জি প্রস্তুত করে।
হিন্দু বিক্রমী
বর্ষপঞ্জির নামকরণ করা হয় বিক্রমাদিত্যের নাম অনুসারে, এটা শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব
৫৭ অব্দ থেকে। ভারত ও নেপালের অনেক স্থানের মত গ্রামীণ বাঙ্গালী সম্প্রদায়ে বাংলা
বর্ষপঞ্জির কৃতজ্ঞতা বিক্রমাদিত্যকে দেয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য অঞ্চলে খ্রিষ্টপূর্ব
৫৭ অব্দে সেই বর্ষপঞ্জির সূচনা হলেও বাংলা বর্ষপঞ্জি শুরু হয়েছিল ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে।
প্রথম বাঙালি নৃপতি ছিলেন শশাঙ্ক। ৫৯৩ সালের ( ৩ মাসের একটু বেশি) রাজা শশাঙ্ক গৌড়ের
নৃপতি লাভ করেন। আর আমাদের বাংলা সন সেই সময় থেকে গণনা হয়ে আসছে। অর্থাৎ রাজা শশাঙ্কই
বাংলা সন এর প্রবর্তক। (মুঘল সম্রাট আকবর শুধুমাত্র পরিমার্জন করেন।) বর্তমানে সংস্করণকৃত
বাংলা পঞ্জিকাকে অনসরণ করা হয়।
হিন্দু
পণ্ডিতগণ সূর্য, চন্দ্র এবং অন্যান্য গ্রহসমূহের ক্রমাবর্তনকে পর্যবেক্ষণ এবং হিসাব করে সময়ের হিসাব রাখার চেষ্টা করতেন। সূর্য সম্পর্কিত এই হিসাব নিকাশ
সংস্কৃত ভাষার বিভিন্ন জ্যোতিঃশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থে উঠে এসেছে, যেমন ৫ম শতকে আর্যভট্ট
কর্তৃক রচিত আর্যভট্টীয়, ৬ষ্ঠ শতকে লটদেব কর্তৃক রচিত রোমক এবং বরাহমিহির কর্তৃক রচিত পঞ্চসিদ্ধান্তিকা, ৭ম শতকে ব্রহ্মগুপ্ত
কর্তৃক রচিত খাণ্ডখাণ্ড্যক ইত্যাদি। এই গ্রন্থগুলোতে সূর্য
সহ ও বিভিন্ন গ্রহ
সম্পর্কে লেখা হয় এবং এদের স্থানান্তর সম্পর্কিত হিসাব-নিকাশ এবং বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়। অন্যান্য গ্রন্থ যেমন সূর্য সিদ্ধান্ত ৫ম থেকে ১০
শতকে রচিত হয় এবং এর অধ্যায়গুলোতে বিভিন্ন
গ্রহ এবং দেব দেবী সংক্রান্ত পুরাণ দেখা যায়। ভারতীয় রাজ্যগুলো যেমন পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামের বাঙ্গালীদের ব্যবহৃত বাংলা বর্ষপঞ্জি সূর্য সিদ্ধান্ত নামক সংস্কৃত গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে বানানো বলে অনেকে বলে থাকেন। এখানে মাসগুলোর ঐতিহাসিক সংস্কৃত নাম রক্ষা করা হয়, সেই সাথে এর প্রথম মাসের
নামও বৈশাখ। এই বর্ষপঞ্জি হিন্দু
বর্ষপঞ্জি ব্যবস্থার সাথে শক্তভাবে বন্ধনে আবদ্ধ এবং বিভিন্ন বাঙ্গালী হিন্দু উৎসব এটা দেখে ঠিক করা হয়।
সনাতন
বাংলা বর্ষপঞ্জী
৫৫০
খ্রিষ্টাব্দের দিকে বরাহমিহির “পঞ্চসিদ্ধান্তিকা”
নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। গ্রন্থটি পাঁচটি খণ্ডে সমাপ্ত। এই গ্রন্থটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞান
এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের সংক্ষিপ্তসার বলে অভিহিত করা হয়। পঞ্চসিদ্ধান্তিকার পাঁচটি খণ্ডের নাম- এই সিদ্ধান্তগুলো হল-
-সূর্যসিদ্ধান্ত, বশিষ্ঠসিদ্ধান্ত, পৌলিশ সিদ্ধান্ত, রোমক সিদ্ধান্ত ও ব্রহ্ম সিদ্ধান্ত।
প্রাচীন দিন, মাস, বৎসর গণনার ক্ষেত্রে 'সূর্যসিদ্ধান্ত' একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বরাহমিহিরের পরে ব্রহ্মগুপ্ত নামক অপর একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী (জন্ম ৫৯৮) একটি সিদ্ধান্ত রচনা করেছিলেন। এই গ্রন্থটির নাম
ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত।
এই
গ্রন্থটি খলিফা আল-মনসুরের আদেশে
সিদহিন্দ নামে আরবি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে সৌর-মাস নির্ধারিত হয়, সূর্যের গতিপথের উপর ভিত্তি করে। সর্বের ভিন্ন অবস্থান নির্ণয় করা হয় আকাশের অন্যান্য নক্ষত্রের বিচারে। প্রাচীন কালের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যের বার্ষিক অবস্থান অনুসারে আকাশকে ১২টি ভাগে ভাগ করেছিলেন। এর একটি ভাগকে
তারা নাম দিয়েছিলেন রাশি। আর ১২টি রাশির
সমন্বয়ে যে পূর্ণ আবর্তন
চক্র সম্পন্ন হয়, তার নাম দেওয়া হয়েছে রাশিচক্র। এই রাশিগুলোর নাম
হল- মেষ রাশি, বৃষ রাশি, মিথুন রাশি, কর্কট রাশি, সিংহ রাশি, কন্যা রাশি, তুলা রাশি, বৃশ্চিক রাশি, ধনু রাশি, মকর রাশি, কুম্ভ রাশি ও মীন রাশি।
সূর্যের বার্ষিক অবস্থানের বিচারে, সূর্য কোনো না কোন রাশির
ভিতরে অবস্থান করে। এই বিচারে সূর্য
পরিক্রমা অনুসারে, সূর্য যখন একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে যায়, তখন তাকে সংক্রান্তি বলা হয়। এই বিচারে এক
বছরে ১২টি সংক্রান্তি পাওয়া যায়। একেকটি সংক্রান্তিকে একেকটি মাসের শেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।
যেদিন
রাত্রি ১২টার মধ্যে সূর্য্য ০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে
প্রবেশ করে তার পরদিনই ১লা বৈশাখ (পহেলা বৈশাখ) হয়। যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সংক্রান্তি হয় তার পরদিনই মাসের প্রথম দিন। মূলত একটি সংক্রান্তির পরের দিন থেকে অপর সংক্রান্ত পর্যন্ত সময়কে এক সৌর মাস
বলা হয়। লক্ষ্য করা যায় সূর্য পরিক্রমণ অনুসারে সূর্য প্রতিটি রাশি অতিক্রম করতে একই সময় নেয় না। এক্ষেত্রে মাসভেদে সূর্যের একেকটি রাশি অতিক্রম করতে সময় লাগতে পারে, ২৯, ৩০, ৩১ বা ৩২
দিন। সেই কারণে প্রতি বছর বিভিন্ন মাসের দিনসংখ্যা সমান হয় না। এই সনাতন বর্ষপঞ্জী
অনুসারে বছর ঋতুভিত্তিক থাকে না। একেকটি মাস ক্রমশঃ মূল ঋতু থেকে পিছিয়ে যেতে থাকে।
আকবরকৃত
সংস্কার ও পহেলা বৈশাখঃ
আমাদের দেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন
মূলত ইসলামী হিজরী সনেরই একটি রূপ। ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বসর সৌর বসরর চেয়ে ১১/১২ দিন
কম হয়। কারণ সৌর বসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বসর
৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও
এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এজন্য ভারতের মোগল সম্রাট আকবারের সময়ে প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সম্রাট
আকবার তার দরবারের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির
ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ১৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবার এ হিজরী সৌর
বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের
নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্চির
প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরী সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির
প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।
মোগল
সময় থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং কিছু আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার সকল ব্যবসায়ী ও দোকানদার পহেলা
বৈশাখে ‘হালখাতা' করতেন। পহেলা বৈশাখ এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটি মূলত: রাষ্ট্রিয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন নিয়ম-কানুনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ছিল
যে
দিন বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম মাস হয়ে এলো সেদিন হতেই বৈশাখের আনন্দটি নবান্নের আনন্দের চেয়েও আরও বড় আলাদা আঙ্গিক পেতে শুরু করে। মহাজন ও ব্যবসায়ীরা বৈশাখেই
‘হালখাতা’
অনুষ্ঠান চালু করেন। হালখাতা হলো যে বছরটি চলে
গেল সেই বছরের হিসাবের যোগ বিয়োগ করে পুরনো খাতাটি তুলে রেখে নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন খাতায় হিসাব চালু করা। প্রবীণরা বলেন, লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো নতুন এই হিসাব খাতায়
উপরে লেখা হতো 'এলাহী ভরসা।' এই এলাহী শব্দটিও
সম্রাট আকবরের ‘তারিখ ই এলাহী’ থেকে
এসেছে বলে জানা যায়।
ইতিহাস
থেকে জানা আরও জানা যায় যে, আগে বৈশাখের অনুষ্ঠানের চেয়ে চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠান ছিল আকর্ষণীয়। এই রেশ ধরেই
বৈশাখের পদার্পণ। এখনও চৈত্রের শেষ দিনে গাঁয়ের বধূরা বাড়ি ঘর পরিষ্কার করে।
বিশেষ করে পানিতে মাটি ছেনে ঘরের ভিতরে ও আঙ্গিনায় লেপে
দেয়। উঠান ঝকঝকে পরিষ্কার করে রাখে।
বঙ্গাব্দের
বারো মাসের নামকরণঃ
বঙ্গাব্দের
বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে নক্ষত্রমন্ডলে
চন্দ্রের
আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে
।
বাংলা মাসের এই নামগুলি হচ্ছেঃ
• বৈশাখ
বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• জ্যৈষ্ঠ
জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে -
• আষাঢ়
- উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া
নক্ষত্রের নাম অনুসারে
. শ্রাবণ
- শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• ভাদ্র
-উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ
নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• আশ্বিন
অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে।
• কার্তিক
কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে .
• অগ্রহায়ণ
(মাগশীর্ষ) – মৃগশিরা নক্ষত্রের
• পৌষ – পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• মাঘ
মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• ফাল্গুন
– উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী
নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• চৈত্র
– চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
সম্রাট
আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী-র
মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল পারসি ভাষায়, যথা: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিয়ার, আবান, আয়ুর, দাই, বহম এবং ইসকদার মিজ।
বাংলা
দিনের নামকরণঃ
বাংলা
সন অন্যান্য সনের মতোই সাত দিনকে গ্রহণ করেছে এবং এ দিনের নামগুলো
অন্যান্য সনের মতোই তারকামন্ডলীর উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে।
• সোমবার
হচ্ছে সোম বা শিব দেবতার
নাম অনুসারে
• মঙ্গলবার
হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের নাম অনুসারে
• বুধবার
হচ্ছে বুধ গ্রহের নাম অনুসারে .
• বৃহস্পতিবার
হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহের নাম অনুসারে
• শুক্রবার
হচ্ছে শুক্র গ্রহের নাম অনুসারে
•শনিবার
হচ্ছে শনি গ্রহের নাম অনুসারে
• রবিবার
হচ্ছে রবি বা সূর্য দেবতার
নাম অনুসারে
বাংলা
সনে দিনের শুরু ও শেষ হয়
সূর্যোদয়ে। ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির
শুরু হয় যেমন মধ্যরাত হতে।
বাংলা
সনের সংস্কারঃ
সন
একটি আরবী শব্দ। পবিত্র কোরআন মজিদে সুরা আনকাবুত এ সানা বা
বছর সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে এই সানা শব্দের
পরিবর্তিত রূপই সন। আর সাল শব্দটি
উর্দু ও ফার্সী ভাষায়
ব্যবহৃত হয়। বাংলায় সনকে অব্দ বা সাল নামে
অভিহিত করা হয়। বাংলা একাডেমী কর্তৃক বাংলা সন সংস্কারের উদ্যোগ
নেয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬
সালে। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ'র নেতৃত্বে এ
কমিটি বিভিন্ন বাংলা মাস ও ঋতুতে গ্রামীণ
জনগোষ্ঠীর আর্থ-সাংস্কৃতিক জীবনে কিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে নির্ণয়
করে সেগুলো হতে উত্তরণের প্রস্তাবনা প্রদান করেন। বাংলা সনের ব্যাপ্তি গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির মতোই ৩৬৫ দিনের। যদিও সেখানে পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের পরিপূর্ণ সময়কেই যথাযথভাবে নেয়া হয়েছে। এ প্রদক্ষিণের মোট
সময় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮
মিনিট এবং ৪৭ সেকেন্ড। এই
ব্যবধান ঘোচাতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। ব্যতিক্রম হচ্ছে সে শতাব্দীতে যে
শতাব্দীকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করা যায় না বা বিভাজ্য
নয়। জ্যোতির্বিজ্ঞান নির্ভর হলেও বাংলা সনে এই অতিরিক্ত দিনকে
আত্মীকরণ করা হয়নি। বাংলা মাস অন্যান্য সনের মাসের মতোই বিভিন্ন পরিসরের হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলোকে দূর
করার জন্য ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
কমিটি বাংলা একাডেমীর কাছে কতকগুলো প্রস্তাব পেশ করে। এগুলো হচ্ছেঃ
• বছরের
প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ বৈশাখ হতে ভাদ্র হবে ৩১ দিনের;
• বাকী
মাসগুলো অর্থাৎ আশ্বিন হতে চৈত্র হবে প্রতিটি ৩০ দিনের মাস;
প্রতি চতুর্থ বছরের ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করে তা হবে ৩১
দিনের।
শেষ
বানীঃ
‘মৈমনসিংহ
গীতিকা’য় বাংলা নববর্ষের
আবাহন ধ্বনিত হয়েছে—"আইল নতুন বছর লইয়া নব সাজ, কুঞ্জে
ডাকে কোকিল-কেকা বনে গন্ধরাজ”। মোটামোটি ভাবে
এই হল আমাদের বাঙালী
ঐতিহ্য, এটাই হল আমাদের বৈশাখের
ঐতিহ্য, যেকোনো বাধা বিপত্তি পেরিয়ে, সহস্র প্রতিকূলতা ছাড়িয়ে, রাস্ট্রীয় অস্থিতিশীলতার মাঝেও আমাদেরকে মাতিয়ে তোলে বর্ষবরণ উদযাপনে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখায় ভুলত্রুটি ক্ষমা চেয়ে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর পঙ্কটি দিয়ে
শেষ করছি
“রসের
আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ
মায়ার
কুজ্বাটিজাল যাক দূরে থাক।”